মা,
আমার আসার কথা যখন জানলে, তখন অনেক খুশি হয়েছিলে, হয়ত ভয়ও পেয়েছিলে। প্রতিটা মুহূর্তে দুশ্চিন্তা ছিল, যদি আমার কিছু হয়ে যায়! তুমি জানতে না, যে আসবে সে ছেলে নাকি মেয়ে? শুধু জানতে যে আসবে সে তোমাকে মাতৃত্ব পাওয়াবে। প্রতিটা সময় আগলে রেখেছ। প্রতিটা পদক্ষেপ সাবধানী ছিল “যদি কিছু হয়ে যায়!” অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর, মরণ যন্ত্রণা সহ্য করে, আমাকে পৃথিবীর আলো দেখালে। তোমার কানে ভেসে আসল আমার চিৎকার, অনুভব করলে মাতৃত্ব ! পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরলে আমায়। শুরু করলে এক নতুন জীবন। দিন রাত একাকার করে পথ চলা শেখাতে লাগলে। কিন্তু হঠাৎ,হঠাৎ করেই তোমাকে চলে যেতে হল। জীবনের শেষ সময় টুকুতে বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়ালে। অবশেষে চলে গেলে। কিন্তু তুমি ফিরে এসেছিলে,অন্যের মাঝে। পরম মমতা,স্নেহ,আর ভালবাসা দিয়েছ। এখন আমি বড় হচ্ছি।প্রতি পদক্ষেপ সাবধানী। কিন্তু ভুল করি।কিন্তু কেউ বলেনা। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক। এত ভালবাসা পাওয়ার পরও আমি স্বার্থপর, তাই খুঁজে ফিরি মা কে, মায়ের ভালবাসা কে। যখন কোথাও একজন মাকে দেখি চোখ আটকে যায়। হঠাৎ একদিন তাকে পেয়েছি।ভাবিনি বেশি। বলে ফেলি “মা”। তিনিও পরম মমতায় আগলে নেন। কিন্তু আমি যে জানিনা “মা কি?” অনুভব করার চেষ্টা করেছি কিন্তু কখনও উত্তর খুঁজিনি। মায়েরা ভুল ধরিয়ে দেয়,নতুন করে পথ চলা শেখায়, রাগ করে কখনও বা অভিমান করে। সন্তান যখন বুঝে ,শুধু মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই আগলে নিবে নিজের আঁচলে। কখনো কি বলে “মা মানে বুঝিস না,মা ডাকবিনা!” হয়ত বা। তাহলে আমি জানি, চিনি তা কি ভুল? হয়তবা! মাতৃত্ব আসে সন্তানের জন্য। তাইতো মায়েদের আবেগ,ভালবাসা ও জীবনের অধিকাংশ অংশ জুড়ে থাকে সন্তানের ভাল,সন্তানের শান্তি ও তাদের সুখ।
“মা”- পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কিন্তু জটিল শব্দ। মা মানে কেউ বোঝেনা। অনেক আছে যারা কিছু বোঝার আগে তাদের মাকে হারিয়ে ফেলে। সারাটা জীবন সান্ত্বনা দেয় “ঈশ্বরের প্রিয় মানুষদের তিনি নিয়ে যান।“ আবার অনেকে পেয়েও বোঝতে পারে না। যারা মায়ের জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তাদের বুকে শেষ বারের মতো শান্তির ঘুম পেয়েছে তারা কখনও বুঝবে না মা কি ?কিন্তু তারা প্রতিটা মায়ের মাঝে খুঁজে ফিরে মা কে। আসলে মা কে বোঝা কঠিন। যদি বুঝত তবে বৃদ্ধাশ্রম হতো না, কেউ হয়ত বলতে পারত না “আমার মা নেই”
লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
